খাঁচার মধ্যে ভয়ে কাঁটা, বলির পাঁঠা

খাঁচার মধ্যে ভয়ে কাঁটা, বলির পাঁঠা


এবং তারপর, 27/12/2021 :  বলির পাঁঠা, অদ্ভুত শব্দ যুগল ! অর্থাৎ বলি দিতে হলে একটাই পশুর নাম উচ্চারণ করা হয়। আর সে হল পাঁঠা বা ছাগল। তা সে বলি দিতেই হোক, চামড়া ছাড়িয়ে মাংসের দোকানে হেঁট মুণ্ড উর্দ্ধ পদে ঝুলিয়ে রাখাই হোক অথবা সুন্দরবনের গ্রামে বাঘ ধরতে ফাঁদ পাতার জন্যেই হোক। বলির উৎসর্গ হতে হবে পাঁঠা বা ছাগলকেই। 

কুলতলি বা ঝড়খালি গ্রামগুলো একেবারেই সুন্দরবন্ লাগোয়া। এই গ্রামগুলোতে প্রায়ই বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। নদী সাঁতরে সুন্দরবনের অরণ্য থেকে বাঘ ঢুকে পড়ে বন লাগোয়া গ্রামগুলোতে। বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গেলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে, খুব স্বাভাবিক সেটা। মুহুর্তে খবর চলে যায় পুলিশ এবং বন দপ্তরে। 

বাঘ আগমনের খবর পেয়ে তৎপর হয়ে ওঠেন বন দপ্তরের আধিকারিকরা। শুরু হয়ে যায় বাঘ খোঁজার প্রাথমিক কাজ কর্ম। এবার কিভাবে যেন খবর পৌঁছে যায় সংবাদ মাধ্যমে। সংবাদ পত্রে বা টেলিভিশনে বাঘের পায়ের ছাপ দেখেই সরকার বাহাদুরের কপালে চিন্তার ছাপ পড়তে শুরু করে। ওপর মহল থেকে চাপ আসতে থাকে যাতে দ্রুত বাঘ ধরা হয়। যেন একজন মানুষের (ভোটারের) গায়েও আঁচড়টুকুও না লাগে। ওপর মহলের চাপ এসে পড়ে ঘটনাস্থলে কর্মরত বন কর্মী এবং পুলিশ কর্মীদের ওপরেও। 

এর পরেই বন কর্মীরা শর্ট কার্টে কাজ হাসিল করার প্রাচীন পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। বাঘ ধরতে নিয়ে আসা হয় খাঁচা, আর খাঁচার মধ্যে টোপ হিসেবে বেঁধে রেখে দেওয়া হয় ছাগলকে। ওপরওলার নির্দেশে দ্রুত বাঘ ধরে এলাকাকে আতঙ্কমুক্ত করতে হবে, তাই এই ফাঁদ পাতা। 

আমাদের দেশ দ্রুত উন্নতি করছে। প্রতি বছর মহাকাশে রকেট পাঠাচ্ছে। কিছু দিন পরে মহাকাশে মানুষও পাঠাবে। দ্রুততার সাথে করোনার প্রতিষেধকও আবিষ্কার করে ফেলেছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও নিত্য নতুন আবিষ্কার করে চলেছে। অথচ বাঘ ধরতে সেই প্রাচীন পদ্ধতিই এখনও অবলম্বন করা হয় কেন?

খাঁচার মধ্যে যে প্রাণীটিকে বাঘের টোপ হিসেবে বেঁধে রাখা হল তার অবস্থা কি হয় ? ভয়ে সে বেচারি কাঁপতে থাকে। ত্রাহি ত্রাহি চীৎকার করতে থাকে। বিশেষ করে বাঘ যখন খাঁচার কাছে চলে এসে হুঙ্কার দেয়, সে তখন অসহায়ের মত ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। নিজেকে বাঁচানোর কোনো উপায় তার আর থাকেনা। 

আমাদের দেশে 'মানবাধিকার' শব্দের বহুল প্রচলন দেখি। কিন্তু 'পশু অধিকার' শব্দটির তেমন কোনো কদর নেই। বাঘকে ট্র্যাক করার জন্যে ট্র্যাকার, সেন্সর, ক্যামেরা অনেক কিছুই ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি ড্রোন উড়িয়েও বাঘের সঠিক অবস্থান খূঁজে বের করা যেতে পারে। তারপর অত্যাধুনিক উপায়ে তাকে ট্র্যাঙ্কুলাইজ করে খাঁচাবন্দী করা যেতেই পারে। কিন্তু সে সব কিছুই হয় না। নিরীহ একটি প্রাণীকে জোর করে টোপ হিসেবে বেঁধে রেখে দেওয়া হয় বাঘের খাঁচার মধ্যে। ফাঁদ পাতা হয়। ওরা বলির পাঁঠা ! বাঘ ফাঁদে ধরা দিয়ে খাঁচায় ঢুকবে। আরাম করে বেঁধে রাখা প্রাণীটাকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে। ঘুমিয়ে পড়বে, পরে হয়ত তাকে ফের অরণ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে নতুবা দেশের কোনো এক চিড়িয়াখানায় চালান করে দেওয়া হবে স্রেফ মানুষের বিনোদনের জন্যে।

এটা কি নৃশংসতা নয় ? চরম নিষ্ঠুরতা নয় ? অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকা সত্বেও কেন পশুগুলোকে এইভাবে 'অমানবিকতার' দিকে ঠেলে দেওয়া হয় ? কেন এইভাবে ওদের বলির পাঁঠা করা হয় ? ওদের অপরাধটা কি ?

Comments

Popular posts from this blog

মৃত্যুর পরেও তানসেনের দেহে প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন কে ?

হনুমানজী কি আজ বেঁচে আছেন ?