লক ডাউনের পর এবার কি ? জানতে চাইছে গোটা দেশ

দেশ

"এবং তারপর",  অরিন্দম নন্দী , ২৮/০৫/২০২০ :   গত বছর ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে করোনা তার বিষাক্ত ফনা তুলে  রেখেছে। দুনিয়ার তাবড় দেশগুলো, যারা এতদিন নিজেদের সবচেয়ে এগিয়ে থাকা উন্নত দেশ বলে গলা চড়াত, যারা  অহংকারে আর ধরিত্রী স্পর্শ করতে চাইত না, বক্র হাসি ঠোঁটের ধারে খেলিয়ে যারা এতদিন দুনিয়াকে শাসন করবে বলে স্বপ্ন দেখছিল, আজ তারাই  এই ভাইরাসের সামনে নতজানু হয়ে প্রাণ আর মান  বাঁচাতে ব্যস্ত  উঠেছে। বাঘা বাঘা মিসাইল, উন্নত প্রযুক্তির উপগ্রহ কিংবা পারমানবিক অস্ত্র কিছুই আর কাজে আসছে না ধুলোর থেকেও মিহি এক অচেনা শত্রুর সামনে। 
গোটা দুনিয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষ এখন ভীষণভাবে অসহায় হয়ে পড়েছে এমন এক শত্রুর সামনে, যাকে  সেভাবে চোখেই  দেখা যায় না অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া, আর  ঠিক এখানেই ভূপতিত মানব অহংকার। প্রকৃতির সামনে অসহায় উন্নত মানব সমাজ। পরাজিত বন্দী সৈনিকের মত দেখতে লাগে।
যদি এমন প্রশ্ন ওঠে, করোনা মহামারীর জন্যে মানব সমাজের সবচেয়ে ক্ষয়ক্ষতি কোন জায়গায় হয়েছে ? তার উত্তর হবে অর্থনীতি। করোনা মহামারী দুনিয়ার প্রত্যেক দেশের অর্থনীতির কোমর ভেঙে দিয়েছে, আর এটা ধ্রুব সত্য কথা।
প্রথমত করোনা কি ? কতটা ক্ষতিকর ? এই প্রশ্ন খুঁজতে গিয়েই মানুষ অনেকটা দেরি করে ফেলেছে, তারপর অচেনা  শত্রুর সাথে লড়াই করতে গিয়ে নানান বিভ্রান্তি এবং অজ্ঞতা  থেকে বিভিন্ন  ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে বা নিতে বাধ্য হয়েছে বলা ভাল। ভারতবর্ষেও তাই হয়েছে। অন্য্ দেশ কি কি সিদ্ধান্ত  নিচ্ছে সেটা  দেখতে গিয়ে ভারত আরও দেরি করে ফেলেছে। আবার কোনো কোনো দেশ তো এই ভাইরাসকে আদৌ গুরুত্ত্ব দিতেই চায় নি, ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। তারা আরও দেরি করে ফেলেছে। আর বলা বাহুল্য, এই দেরি করাটা সেই সব দেশের জন্যেই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।তার মাশুল তারা আজও গুনছে।
ভারতের মত উন্নতশীল দেশ করোনা ভাইরাসকে প্রথমে একেবারেই বুঝে উঠতে পারে নি, তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যতক্ষণ না বলে দিচ্ছে করোনা ভাইরাস একটি অতিমারীতে পরিণত হয়েছে, ততক্ষণ ঘুম ভাঙেনি ভারতেরও।  আর অদ্ভুতভাবে দেশের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিগুলোর কাছেও কোনো খবর ছিল না এই ভাইরাস সম্বন্ধে। যেখানে অন্যান্য দেশের আকাশে কতটা মেঘ জমা হল, কোন দেশের কোন গাছে নতুন কোন পাখি এসে বসল, তার চুল চেরা বিশ্লেষণ করে জীবন বাজি রেখে তথ্য তুলে নিয়ে আসে আমাদের দেশের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিগুলো, তখন এতবড় একটা অতিমারী যা কিনা দেশের জীবনযাত্রার ভোল পাল্টে দিতে চলেছে, সে সম্বন্ধে কোনো তথ্যই পেল না প্রথম দুই তিন মাসের মধ্যে ? এ ও কি সম্ভব ! যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে বলতেই হবে যে, এই এজেন্সিগুলো খুব 'পেশাদার' মানতে কোনো দ্বিধা না থাকলেও, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ এজেন্সি নয়।  হয়ত বা এই এজেন্সিগুলোকে আরও ঝকঝকে করে তোলার সময় এসে পড়েছে। সময় আমাদের অনেক শিক্ষা দেয়, কিন্তু সেই শিক্ষা যদি কাজে না লাগানো যায়, সেই শিক্ষার মর্মটুকু বোঝা না যায়, তাহলে খুব মুশকিল। আর সেই মর্ম বুঝতে গেলে তো নিজেকে আতস কাঁচের নিচে রেখেই দেখতে হবে, তাই না ?
করোনা ভাইরাস মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটাই বদলে দিয়েছে। হয়ত তা দেশের মানুষ কিছুটা বুঝে নিয়েছে, কিন্তু এখনই সবটা বোঝে নি। কারন মানুষ এখনো লক ডাউনের আওতায় বাড়ির মধ্যে রয়েছে। করোনার  সাথে লড়াই করার প্রথম জড়তা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারে নি। লক ডাউন উঠে যাওয়ার  পর প্রথম যখন দেশবাসীর প্রথম ক্ষিধে পাবে, আর সে বাইরে বের হবে তখন দেখতে পাবে দুনিয়ার  রঙ কতটা বদলে গিয়েছে। তার তখন অনেক কিছুই অচেনা লাগবে। ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতিও মানিয়ে নিতে শিখবে সবাই। করোনা ভাইরাস আসার পর অনেকগুলো নতুন শব্দ আমরা শিখেছি। তারই মধ্যে একটি শব্দ হল 'লক ডাউন'। এতদিন দেশের মানুষ 'লক আউট' কথাটির সাথে অভ্যস্ত ছিল, কিন্তু 'লক ডাউন' শব্দটির সাথে কমবেশি পরিচিত থাকলেও শব্দটির যথার্থ মানে  বোধ হয় এই প্রথম বুঝতে শিখল। 
আমাদের দেশে করোনা মহামারী মোকাবিলা করার জন্যে প্রথমেই লক ডাউনকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়া হল। প্রধানমন্ত্রীর আহবানে দফায় দফায় লক ডাউন মেনে চলতে লাগল গোটা দেশ। কিন্তু এই হাতিয়ার যে বিফলে গিয়েছে, তা অবশ্য দেশের মানুষ এখন হারে হারে বুঝতে পেরে গিয়েছে। কেননা এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাসকে দেশের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে তো আনা যায়ই নি, বরং এই মারণ ভাইরাস তার ভ্রুকুটি আরও বক্র করেছে । এই মুহূর্তে তার ফায়দা তুলতে চাইছে দেশের বিরোধী দলগুলি। কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ রাজনীতির ব্যাপার, যা এখানে আলোচ্য নয়। তবে এই যে বিরোধীরা লক ডাউন ব্যর্থ বলে নানান কথা বলছে, সেটা আসলে ওই উত্তর দেখে অঙ্ক মেলানোর মত ব্যাপার। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, তাহলে লক ডাউন করা কি উচিত হয় নি ? গোটা বিশ্বেই তো লক ডাউন করা হয়েছিল ! ব্যাপারটাকে ঠিক এভাবে দেখলে চলবে না। করোনা প্রতিরোধের সবচেয়ে ভাল অস্ত্র ছিল সামাজিক দূরত্ব, আর সেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেই সবচেয়ে সস্তার অস্ত্রটা ছিল এই লক ডাউন। আর সরকার বাহাদুর সেই অস্ত্রটাই সবার আগে বেছে নিয়েছিল।
আমাদের দেশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা নিশ্চিত করতে গিয়ে লক ডাউন অস্ত্রটাকে কাজে লাগাতে হয়েছে একরকম বাধ্য হয়েই, কেননা আমাদের দেশে মানুষ খুব একটা নিয়মানুবর্তিতার ধার ধারে না। লক ডাউন ছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ছিল প্রায় অসম্ভব। কিন্তু সেই লক ডাউনকেই কাজে লাগিয়ে যদি আমাদের দেশ অনেক বেশি পরিমাণে দেশবাসীর লালারসের নমুনা পরীক্ষা করতে পারতো, তাহলে এতদিন ধরে লক ডাউন চালাতে হত না।এই ব্যাপারে ত্রিপুরা খুব ভাল একটা কাজ করেছিল, সেটা হল লক ডাউন করে প্রত্যেক মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে টেস্ট করা। যদি গোটা দেশে এটা চালু করা যেত, তাহলে প্রথম দুই দফার মধ্যেই হয়ত অনেকটা সমাধান করা যেতে পারতো। 
যদি আমরা প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা টেস্ট করাতে পারতাম লক ডাউনকে মেনে চলে, সেই টেস্টের রিপোর্ট  যদি দ্রুত জানা যেত এবং  কোয়ারেন্টাইন করা যেত,  আর বাকিদের ছাড় দেওয়া হত, তাহলে অনেকটাই ঠেকানো যেত  যেত এই মারণ ভাইরাসকে। যেমন করা হয়েছিল ভিয়েতনামে। কিন্তু আমাদের দেশে তা করা হয় নি। প্রথমে অনেকেই ভেবেছে, ১৩০ কোটি মানুষের বাস এই দেশে, সেটা আদৌ সম্ভব কিনা ! কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, নির্বাচনের সময় ভোটার স্লিপ দিতে তো বাড়িতে বাড়িতে যাওয়া হয়, জনগণনার জন্যেও বাড়িতে বাড়িতে যাওয়া হয়, তাহলে এক্ষেত্রে নয় কেন ?  তবে আর একটা অসুবিধা ছিল, আর সেটা হল আমাদের দেশের পরীক্ষা করার কিট-এর অভাব। আমরা ভরসা করে চীন থেকেই টেস্ট কিট নিয়েছিলাম, যেখানে ত্রুটিপূর্ণ সামগ্রী দিয়ে চীন আমাদের ঠকিয়েছে, যেখানে সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে অনেকটাই। চীন অবশ্য একইভাবে দুনিয়ার অন্যান্য দেশগুলিকেও ঠকিয়েছে। কিন্তু যদি আমরা করোনা ভাইরাসকে গোড়া থেকেই সেভাবে গুরুত্ত্ব দিতাম, তাহলে আমাদের উচিত ছিল, দেশের বাজেটের অন্যান্য খরচ খরচা  কাটছাঁট করেও আমাদের দেশেই কিট তৈরী করে নেওয়া। যেটা এখন করা হচ্ছে। একমাত্র প্রচুর পরিমাণে টেস্ট করা এবং তার দ্রুত রিপোর্ট পাওয়া এবং সেই অনুযায়ী মানুষকে কোয়ারেন্টাইন করা বা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া,  এটাই ছিল করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সফল পদক্ষেপ। 

আমাদের দেশে  অর্থনীতিতে লক ডাউনের যে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে তা তো বোঝাই  যাচ্ছে, কিন্তু তার চেয়েও বেশি যে বিষয়টিতে প্রভাব পড়েছে, তা হল সামাজিক ব্যবস্থায়। যদি কোনো জায়গায় কোনো মানুষের অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া যায়, সেই গোটা এলাকার দিকে মানুষ অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। যদি কেউ করোনা আক্রান্ত হয়, তাহলে সে যেন খুনি বা ধর্ষকের চেয়েও ঘৃণ্য অপরাধী। করোনা আক্রান্তের আত্মীয় পরিজনরা মৃতদেহের কাছেও আসতে চাইছে না। আসলে  এ সবই করোনা সম্বন্ধে এক ধরনের অজ্ঞতা। ভাইরাসটি সম্বন্ধে মানুষ যদি সামান্য  কিছুটা অবগত থাকত, তাহলে এই অবস্থা হত না। এখন মানুষ মানুষের ধারে কাছেও ঘেঁষতে চাইছে না, প্রত্যেকের চাহনিতে কেমন যেন একটা সন্দেহ সন্দেহ ভাব। কেউ কারোর জিনিস চট করে ছুঁতে চাইছে না, কেউ কাউকে আপ্যায়ন করে বাড়িতে নিয়ে আসছে না। এটা কি শুধুই সামাজিক দূরত্ব, নাকি মানসিক দূরত্ব ? হয়ত একদিন এই মরন ভাইরাসের  প্রতিষেধক আবিস্কারও হয়ে যাবে আর তখন হয়ত এই দূরত্বও ঘুচে যাবে। আগামী প্রজন্ম হয়ত আজকের দিনগুলোকে নিয়ে অনেক গল্প করার রসদ পেয়ে যাবে নিজেদের মধ্যে। হয়ত অনেক হাসিঠাট্টাই  হবে আজকের দিনগুলোকে নিয়ে।
দীর্ঘ দিনের লক ডাউন মানুষের মধ্যে কাজ করার স্পৃহা কমিয়ে দিয়েছে। মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি করে অনলাইন কাজে ঝুঁকেছে। তবুও আমাদের দেশে অনলাইনে ঝুঁকি নেওয়ার নিরাপত্তা কোথায় ?  দেশে উৎপাদন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে নানা রকম বিধি নিষেধ থাকায়। বাজারে যোগান কমেছে, অর্থনীতির নিয়ম মেনে বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। এর ফলেই মানুষের সামর্থ্য কমে গিয়েছে। যার ফলে মানুষের আত্মবিশ্বাস তলানিতে চলে গিয়েছে। মানুষ মানুষকে অবিশ্বাস করছে। কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে। এমন অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে হয়ত কাছে যেতেই হয়, যেমন সেলুন, যেমন খেলাধুলা ইত্যাদি। এই সব ক্ষেত্রগুলির ওপর নির্ভর করে  যে সব ব্যবসাগুলি রয়েছে, সেগুলো এখন কতটা চলবে, কেউ জানে না। এরফলে বাজারেও অস্থিরতা দেখা দেবে, কালোবাজারি বাড়তে বাধ্য। দেশে অপরাধও নিঃসন্দেহে বাড়বে। সব থেকে বড় কথা কোনো দ্রব্যের দাম বাজারে কেমন পাওয়া যাবে, তা উৎপাদক যেমন আগে থেকে আঁচ করতে পারবে না, তেমন ক্রেতাও বুঝতে পারবে না বাজারে কোন জিনিসের কত দাম। এই বাজার বুঝে উঠতে সময় লাগবে সরকারেরও।  সব মিলিয়ে একটা অদ্ভুত পরিস্থিতিতে পড়বে মানুষ। 
প্রধানমন্ত্রী অবশ্য অনেকদিন আগেই বলে ছিলেন যে, 'দীর্ঘ লক ডাউনের ফলে ২১ বছর পিছিয়ে যাবে আমাদের দেশ'. সেটা ২১ বছর না হয়ে ৫১ বছর হলেও হয়ত বলার কিছু থাকবে না।  তাহলে উপায় ? এই  সমস্যার সমাধান কি কিছুই তবে নেই ? ইতিহাস সাক্ষী আছে, এর আগে বহু সমস্যা মানুষ সমাধান করেছে, আমাদের দেশও করেছে। কিন্তু তার জন্যে চাই সুপরিকল্পনা। যার কিছু হবে স্বল্পমেয়াদি আর কিছু হবে দীর্ঘ মেয়াদি। তবেই সমাধান সম্ভব। করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক যতদিন না বের হচ্ছে, ততদিন এই ভাইরাসকে জীবনের অঙ্গ  হিসেবেই নিয়ে চলতে হবে, বলে মত প্রকাশ করেছেন আমাদের দেশের নেতারা। কিন্তু এই ভাইরাস যেভাবে মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে, তেমন আরও কিছু বদল আনতে হতে পারে আমাদের দেশে , সমাজে, জীবনযাত্রায় বা এমনকি হয়ত বা সংবিধানেও।
প্রথমত, এই মুহূর্তে মানুষের হাতে টাকার দরকার, ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর দরকার। এই কথা বলেছেন সদ্য নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তিনি বলেছেন দরকারে দেশ টাকা ছাপিয়ে সকলের হাতে, বিশেষ করে দারিদ্র লোকের হাতে টাকার যোগান দিক, তাতে আপাতত মুদ্রাস্ফীতি হলে হবে। সেটা পরে সমাধান করা যাবে। কিন্তু দেশের প্রত্যেক মানুষের হাতে এককালীন কিছু টাকা এলেই কি দেশের বেশিরভাগ মানুষের ক্রয়  ক্ষমতা বেড়ে যাবে ?  ধরা যাক, কোনো শ্রমিক হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা পেলেন, টাকা হাতে পেয়ে তার শ্রম করার আপাত ইচ্ছা কিছুটা হলেও নষ্ট হবে। তার শ্রম না পেয়ে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হবে। পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে, তখন অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে সেই শ্রমিকটিই হয়ত আর ওই পণ্য  কিনতে চাইবে না। তাহলে ? আসল কথা হল মানুষের হাতে টাকার যোগান তার কর্ম ক্ষমতার মাধ্যমে বাড়িয়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক মানুষকে অনেকটা পিছিয়ে গিয়েও নতুন করে সব কিছু শুরু করতে হবে। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে নিজেদের কর্ম দক্ষতা বাড়িয়ে তুলতে হবে, দরকারে সরকার বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিতে পারে। কম শ্রমে যাতে বেশি উৎপাদন করা যায়, আমাদের দেশে সবার আগে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। 
এটা খুব সত্যি কথা যে, যতক্ষণ না করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিস্কার করা যাচ্ছে, ততক্ষণ বিভিন্ন বিকল্প উপায়গুলিকেই বেছে নিতে হবে আমাদের দেশকে। তবে একটা অভিনব উপায় অবলম্বন করতে পারে গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশগুলি। সেটা হল নিজেদের মধ্যে একটা স্থায়ী শান্তি চুক্তি করে নিজেদের মধ্যে আক্রমন  না করার অঙ্গীকার করতে পারে। নিজেদের মধ্যে সীমান্তে থাকা অশান্তিগুলো অন্তত বছর দশেকের জন্যে সরিয়ে রাখতে পারে। তাতে সুবিধা হবে এই যে, প্রতি বছর প্রত্যেকটি দেশ সামরিক খাতে যত  টাকা  খরচ করে, তার বেশ কিছুটা অংশ উন্নয়নের জন্যে খরচ করতে পারবে। গবেষণায় খরচ করতে পারবে। গোটা পৃথিবীতে আগামী ১০টা  বছর অন্তত শান্তি কায়েম থাকুক। আর প্রত্যেকটা দেশ নিজেদের দেশের উন্নয়ন করে চলুক। করোনার মত অনাহুত শত্রুরা যাতে আর হানা দিয়ে লক্ষ লক্ষ প্রাণ কেড়ে নিতে না পারে সেই দিকে মন দিক সব দেশগুলো। কূটনৈতিক স্তরে সেটা একেবারেই অসম্ভব নয় বলেই মনে হয়, যদি সদিচ্ছা থাকে। 
আমাদের মত দেশে পেশাগত শিল্পে  বেশি জোর দিতে হবে। আগামী বছরগুলিতে দেশ জনসাধারণকে ঋণ নয়, যোগাবে আত্মবিশ্বাস, যোগাবে প্রশিক্ষণ, গড়ে তুলবে কাজ করার পরিবেশ। মানুষ সরকারের কাছে আসবে নানান অসুবিধার তালিকা নিয়ে, সরকার  বলে দেবে কিভাবে সেই অসুবিধা সহজে দূর করা যাবে। তবে বাড়বে আত্মবিশ্বাস, তবেই গড়ে উঠবে পরস্পর নির্ভরশীলতা। দেশকে নতুন হাতিয়ার হিসেবে সম্পূর্ণ আলাদা মানসিকতা দিয়ে তৈরী করতে হবে আগামী প্রজন্মকে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজনীতি নয়, ধৰ্ম -অধর্ম নয়, এটা মেনে চলতেই হবে। আগে দেশ, পরে রেষারেষি, এটা মেনে চলতেই হবে। দেশ না থাকলে সবকিছুই তো অসার, সেটা বুঝতেই হবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের গোড়া মজবুত করার লক্ষে নামতে হবে। দরকারে সংবিধানকেও সংশোধন করতে হবে। 
নতুন ভারত গড়তে হলে  মানব সম্পদ ছাড়াও দেশের অন্যান্য সম্পদগুলিকে গুরুত্ত্ব দিতে হবে। দেশের বনজ সম্পদ, খনিজ সম্পদ, পশু সম্পদ এই সবগুলিকেই সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।  প্রত্যেক সম্পদকেই সমান  গুরুত্ত্ব দিতে হবে। শুধু মুখে নয়, দেশকে বাস্তবে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, যেমন হিরোশিমা নাগাসাকির পর জাপান হয়েছিল। দেশের খরচ খরচা অনেকটাই কমাতে হবে। আপাতত দেশকে বাহুল্য বর্জন করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি মানুষের জীবন বীমা বাধ্যতামূলক করা উচিত বলে আমার  মনে হয়,  যেমন যানবাহনের  ক্ষেত্রে করা হয়। তাহলে যে কোনো ঘটনার জন্যে দেশকে কথায় কথায় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না. এভাবেই প্রতিটা ধাপ মেনে চলে মানুষের সামর্থ এবং ক্রয়  ক্ষমতা বেড়ে গিয়ে একটা  সাম্যের চেহারা আসবে বলে আমার ধারণা। তবেই শূন্য থেকে শুরু করলেও দেশ ফের পূর্ণ  গতিতে  এগিয়ে যাবে দেশ। 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ : এই রচনায় সমস্ত মতামত আমার নিজস্ব। আমার এই রচনা কাউকে আঘাত করার বা বিরোধিতা করার জন্যে নয়।



Comments

Popular posts from this blog

মৃত্যুর পরেও তানসেনের দেহে প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন কে ?

হনুমানজী কি আজ বেঁচে আছেন ?

খাঁচার মধ্যে ভয়ে কাঁটা, বলির পাঁঠা