বছরে ৫ বা তার বেশি ঘূর্ণিঝড় দেশে বিপর্যয় ডেকে আনছে

 

বছরে ৫ বা তার বেশি ঘূর্ণিঝড় দেশে বিপর্যয় ডেকে আনছে

লেখক : অরিন্দম নন্দী 
(সাংবাদিক)
এবং তারপর, ২৮/০৫/২০২১ :  ভারতবর্ষে ক্রমশই বেড়ে চলেছে ঘূর্ণিঝড়। তা সে বঙ্গোপসাগরেই  হোক অথবা আরব সাগরে। প্রতিবছর একাধিক ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হতে হচ্ছে ভারতবাসীকে। আর এই ঘূর্ণিঝড়গুলির কারন হিসেবে দেশের জলবায়ুর পরিবর্তনকেই দেখছেন ভূবিজ্ঞানীরা।

ভারতে জলবায়ু এখন বেশ কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। ঠিক সময় অর্থাৎ ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে না দেশের সব জায়গায়, এর ফলে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ফলে বেড়ে চলেছে দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুর সংখ্যাও। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের বদভ্যাস, নিয়ন্ত্রণহীন জীবন ও জীবিকাকেও দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীরা। এমনকি অজ্ঞতা এবং শিক্ষার অভাবের কারণেও বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসছে মানুষের জীবনে। ভারতবর্ষের মত দেশেও উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা কিনা গোটা বিশ্বের সামনেও বিরাট মাপের বিপদকে এগিয়ে আনছে। 


সমস্যাটা হল, ভারতে এই বিষয়গুলি নিয়ে সেভাবে প্রচার করা হয় না।  দেশে উষ্ণতা বাড়ছে, অথচ সেই উষ্ণতা থেকে রেহাই পেতে প্রত্যেকে ঘরে এয়ার কন্ডিশন লাগিয়ে যাচ্ছেন সামর্থ্য অনুযায়ী। বাতানুকূল মেশিনগুলি থেকে সমষ্টিগত উষ্ণ বায়ু বাতাসকে আরও উষ্ণ করে তুলছে। দেশের শহরাঞ্চলগুলিতে অপরিকল্পিতভাবে প্রমোটিং করে বাড়ি বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। যা কিনা বাস্তু এবং নগর বিজ্ঞানের অন্তরায়। শহরাঞ্চলগুলি প্রতিদিন একটু একটু করে বেড়েই চলেছে। অথচ সেই অনুপাতে নিকাশি এবং রাস্তাঘাট নেই।   রাস্তা তৈরি হলেও কাটা পড়ছে অসংখ্য গাছ।  যত্রতত্র ধ্বংস করা হচ্ছে সবুজ প্রকৃতিকে। এর ফল হয়ে উঠছে মারাত্মক।

সবচেয়ে ভয়ানক হয়ে উঠছে সবুজ ধ্বংস বিষয়টি। মানুষ তার প্রয়োজনে গাছ কেটে ফেলছে, বন ধ্বংস করে চলেছে। এর ফলে বন্য  জীবন বিপর্যস্ত হয়ে চলেছে।  দেশের অরণ্য অঞ্চলগুলিতে এখনো চোরা কারবার রুখে দেওয়া যায় নি।  এখনো সবুজ অরণ্য অথবা বন্য পশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ফেলা যায় নি।   ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বেড়েই চলেছে, যার মাশুল গুনতে হচ্ছে মানুষকে। দেশের অনেক জায়গা থেকেই জলস্তর নেমে  গিয়েছে বেশ কিছুটা, অথচ দেশজুড়ে পানীয় জল নষ্ট না করার মতন প্রচার এখনো হয় নি।  অদূর ভবিষ্যতে এর পরিণামও ভুগতে হতে পারে দেশের মানুষকে। এর পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা সাবধান করে দিয়েছেন খনিজ পদার্থ অপরিকল্পিতভাবে উত্তোলন করে নেওয়ার ব্যাপারেও। 

প্রতি বছর ভারতে বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগর মিলিয়ে পাঁচটিরও বেশি ঘূর্ণিঝড় আছাড় মারছে। গতকালই বঙ্গোপসাগর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আছড়ে পড়েছিল ওড়িশা উপকূলে, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রচুর। কিন্তু কিছুদিন আগেই আরও একটা ঘূর্ণিঝড় আরব সাগরে উৎপন্ন হয়ে ভারতের পশ্চিমপ্রান্তে আঘাত হেনেছে। যার নাম টকটেই।  দেখা যাচ্ছে স্থলভাগে আছড়ে পরার সময় ইয়াসের গতিবেগ ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়, কিন্তু আরব সাগর থেকে উদ্ভূত টকটেই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। এই গতিবেগ ১৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় পর্যন্ত হতে পারত। তাহলে দেখা যাচ্ছে বঙ্গোপসাগর থেকে উদ্ভূত ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের থেকে টকটেই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ বেশি ছিল ৩০থেকে ৩৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। তাই টকটেই ইয়াসের থেকেও বেশি ধ্বংসাত্মক ছিল। স্বাভাবিকভাবেই  ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল বেশ কিছুটা বেশি।


যেভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে চলেছে আমাদের দেশে, তা রুখতে একটা স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত  সরকারের। দেশের বিজ্ঞানী থেকে নতুন প্রজন্ম সকলেই এই কথা বলছেন, আর তাতে মানব সম্পদ এবং সরকারি তহবিল বেশ কিছুটা বেঁচেও যায়।  এই পরিকল্পনার মধ্যে সবচেয়ে প্রাধান্য দেওয়া উচিত যে বিষয়টিকে, তা হল সবুজ ধ্বংস বন্ধ করা এবং যথেষ্ট সবুজায়ন। পশ্চিমবঙ্গের মত রাজ্যে এর আগে আইলা, বুলবুল, আম্ফাণের মত ঘূর্ণিঝড়ে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য অনেকটাই ধ্বংস হয়েছে। ইয়াসের জন্যেও এই ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে ঝড় চলার সময় অরণ্য থেকে বাঘ এবং হরিণকে বেরিয়ে আসতে  দেখা গিয়েছিল। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য ঘূর্ণিঝড়কে অনেকটাই প্রতিহত করতে পারে। সুন্দরবনে যে পরিমাণ গাছ এই ঝড়গুলিতে বিনষ্ট হয়েছে, সেই পরিমাণ গাছ কি ফের লাগানো হয়েছে সেখানে ? এই প্রশ্নের উত্তর এখনো পাওয়া যায় নি। সুন্দরবনের মত দেশের অন্যান্য রাজ্যেও পরিস্থিতিটা প্রায় একই রকম।  এই সব কারণেই প্রাকৃতিক বিপর্যয় বেড়ে চলেছে ভারতবর্ষে, যার মাশুল গুনতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। তবে শুধুমাত্র সরকারি পরিকল্পনাই নয়, সচেতন হতেই হবে সাধারণ মানুষকে, তবেই বাঁচবে দেশের মানুষ তথা ভারতবর্ষ।

Comments

Popular posts from this blog

মৃত্যুর পরেও তানসেনের দেহে প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন কে ?

হনুমানজী কি আজ বেঁচে আছেন ?

খাঁচার মধ্যে ভয়ে কাঁটা, বলির পাঁঠা